বিনোদন ভুবনকে কখনোই কোনো প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালে আটকে রাখা যায় না। বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে যে কেউ যে কোনো দেশের সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল উপভোগের সুযোগ পান। তারপরও নানা অজুহাতে উপমহাদেশের কুটিল রাজনীতির আঁচড় পড়ে বিনোদন অঙ্গনে। তবে সীমানার বেড়া কি আর বিনোদনকে আটকে রাখতে পারে? হয়তো সাময়িকভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে কিছুকাল আগেও জনপ্রিয় ছিল ভারতীয় বাংলা আর হিন্দি সিরিয়ালগুলো। এসব সিরিয়ালে আসক্ত ছিল দেশের একটি বিশাল অংশ। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের হাওয়া দেশের টিভি পর্দায়ও লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বেড়েছে পাকিস্তানি সিরিয়াল ও নাটক দেখার আগ্রহ। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, বিশেষ করে ফেসবুকে বেশকিছু গ্রুপ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানি সিরিজের বাংলাদেশি দর্শকদের নিয়ে। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান খুব একটা হয়নি। ভাষাগত সমস্যাও এ ক্ষেত্রে প্রকট ছিল। তাই পাকিস্তানি ড্রামা সিরিজ নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশি সংস্কৃতিপ্রেমীর বেশিরভাগ দর্শক শহরকেন্দ্রিক।
উপমহাদেশের মধ্যে পাকিস্তান ছোট পর্দার অনুষ্ঠান তৈরিতে বরাবরই বেশ এগিয়ে। দেশটির বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি মূলত টিকিয়ে রেখেছে টেলিভিশন সিরিয়ালগুলো। ইদানীং ভারতীয় ও বিদেশি অন্যান্য ভাষার সিরিজের পাশাপাশি দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে উঠে এসেছে পাকিস্তানি বিভিন্ন টিভি সিরিজ। বাংলাদেশে সেভাবে বহুল চর্চিত না হলেও গত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে উর্দুভাষী কয়েকটি নাটক ও সিরিজ। কিছু কিছু উর্দুভাষী সিরিজ বাংলায় ডাবিং করে বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ পায়। এসব টিভি সিরিজ বেশিরভাগই পাকিস্তানি টিভিতে প্রচারের পর আপলোড হয় ইউটিউবে। কেবল টিভির কল্যাণে সহজেই সেগুলো উপভোগ করা যায়। এরই মধ্যে কিছু পাকিস্তানি নাটক-সিরিয়াল বেশ সাড়া জাগায়। ‘হামসাফার’, ‘বারজাখ’, ‘পারিজাদ’, ‘কাভি ম্যায় কাভি তুম’, ‘ভেরি ফিল্মি’—এসব পাকিস্তানি সিরিজ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়। এ ছাড়া ‘মেরে পাস তুম হো’ নিয়েও উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। মিষ্টি প্রেমের গল্প নিয়ে কমেডি ঘরানার সিরিজ ‘সুনো চান্দা’ও এ দেশে জনপ্রিয়।
পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিয়ালের একটি ‘কাভি ম্যায় কাভি তুম’। এআরওয়াই ডিজিটাল চ্যানেলে চৌত্রিশ পর্বের এই ধারাবাহিক গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হয় নভেম্বরে। রোমান্টিক গল্পের সিরিয়ালটি আইএমডিবিতে রেকর্ড ৯.১ রেটিং পেয়েছে। প্রধান দুই চরিত্রে ছিলেন ফাহাদ মুস্তাফা ও হানিয়া আমির। এটি ছাড়াও বাংলাদেশি দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছেন ‘পারিজাদ’ দেখে। সহজ-সরল পরিশ্রমী যুবক পারিজাদ জীবনযুদ্ধে বারবার পরাজিত হয়েও নিজের আস্থায় অবিচল থাকে—আর সফল হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ‘পারিজাদ’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন আহমেদ আলী আকবর, ইউমনা জাইদি ও কিরন তাবীর। ২০১১ সালে টিভির পর্দায় এলেও বর্তমানেও জনপ্রিয় ‘হামসাফার’। পাকিস্তানই নয়, ভারত-বাংলাদেশেও পছন্দের তালিকায়ও শীর্ষে এ সিরিজটি। পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলকে বৈশ্বিক করে তুলতে বিশাল অবদান রাখে সিরিজটি। নানা পারিবারিক দ্বন্দ্ব আর প্রতিশোধের নিপুণ শিল্প ফুটে উঠেছে হামসাফারে। আরেকটি জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বারজাখ’। ফ্যান্টাসি ড্রামা ঘরানার এ সিরিজের লেখক ও নির্মাতা আসিম আব্বাসি। ফাওয়াদ খান ও সোনম সাঈদ অভিনীত সিরিজটি দেখে রীতিমতো মুগ্ধ নেটিজেনরা।
দর্শকদের মন থেকে বউ-শাশুড়ি আর পরকীয়ার বিরক্তি দূর করেছে এসব পাকিস্তানি সিরিজ। হলিউড, বলিউডের মতোই আইএমডিবি রেটিংয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বেশকিছু পাকিস্তানি টিভি সিরিয়াল। অসাধারণ গল্পের সঙ্গে মেকআপ, পোশাক, কথা বলা—সব কিছুতেই রয়েছে শালীনতা। তাই পরিবারের সবাই মিলেই উপভোগ করা যায়।