আজ শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। নতুন বইয়ের গন্ধে বইপ্রেমীরা মেতে উঠবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রতিবছরই মেলায় খ্যাতিমান লেখকদের বই যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি তরুণ লেখকদের বইও আসে। পাশাপাশি শোবিজ তারকারাও উপহার দেন তাঁদের লেখা বই। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও আসছে বেশ কজন তারকার নতুন বই।
আবুল হায়াতের আত্মজীবনী
১০ বছর ধরে আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। গত বছরের শেষ দিকে বইটি প্রকাশিত হয়। বইমেলায়ও রবি পথ পাওয়া যাবে সুবর্ণ প্রকাশনীর স্টলে। প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বইটিতে নিজের জীবনের পুরো জার্নিটি লিপিবদ্ধ করেছেন আবুল হায়াত। তিনি বলেন, ‘জন্ম থেকে এ পর্যন্ত যেসব কথা মনে হয়েছে বলা দরকার, বলেছি। আবার অনেক কথা হয়তো বলা দরকার ছিল, বলা হয়নি। লিখতে গেলে বোঝা যায়, কোনটা লেখা দরকার; আবার কখনো মনে হয়, অনেক বিষয়ে না লিখলেই ভালো। তবু সব মিলিয়ে নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা করেছি এই বইয়ে। আশা করছি, সবকিছু মিলিয়ে আমার পুরো যাত্রাপথ জানা যাবে।’ রবি পথের প্রচ্ছদ এঁকেছেন তাঁর বড় মেয়ে অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত।
‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’
গানের মানুষ ফাহমিদা নবী লিখতেও ভালোবাসেন। তাঁর ভাষায়, ‘লিখতে ভালো লাগে ছোটবেলা থেকেই। আমার বাবার লেখা, কথার ভঙ্গি, গান গাওয়ার অনুভব আমাকে অনুপ্রাণিত করত। আম্মাকে দেখতাম বই পড়তেন, ডায়েরি লিখতেন, ভীষণ ভালো লাগত। আমিও লেখার চেষ্টা করতাম, করছি।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাহমিদা নবী প্রায়ই লিখে রাখেন নিজের জীবনবোধ আর প্রতিদিনের যাপনের কথা। সেগুলোই এবার এল মলাটবন্দী হয়ে। অমর একুশে বইমেলায় শব্দশিল্প প্রকাশনীর স্টলে আজ থেকে পাওয়া যাবে ‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’। তিনি জানিয়েছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন ফাহমিদা নবীর মা। ওই দিন শিল্পীও উপস্থিতি থাকবেন বইমেলায়।
সুষমা সরকারের ‘দ্বিতীয়’
এবার বইমেলায় নিজের দ্বিতীয় বই নিয়ে আসছেন অভিনেত্রী সুষমা সরকার। বিভিন্ন সময়ে লেখা কিছু গল্প মলাটবন্দী করা হয়েছে এতে। বইটির নামও ‘দ্বিতীয়’। তবে এই দ্বিতীয় বলতে তিনি বুঝিয়েছেন নারীদের কথা। সুষমা বলেন, ‘দ্বিতীয় নামে আমার এই গল্প সংকলনের প্রতিটি গল্পে আমি প্রকাশ করতে চেয়েছি বিভিন্ন বয়সের নারীর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, নারীর অবস্থান, একাকিত্ব, তাদের লড়াই ও ক্ষমতায়নের কথা।’ শব্দশিল্প প্রকাশ করেছে বইটি।
শানুর ‘বাঘ মানুষ’
শানারেই দেবী শানু এখন অভিনয় যতটা করেন, তার চেয়ে বেশি সময় দেন লেখালেখিতে। কবিতা, শিশুতোষ গ্রন্থ, উপন্যাস—সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭টি বই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। এবার নিয়ে এসেছেন থ্রিলার উপন্যাস ‘বাঘ মানুষ’। প্রকাশ পেয়েছে আজব প্রকাশনী থেকে। বইটি নিয়ে শানু বলেন, ‘লোভ, লালসা, অহংকার যখন মানুষকে গ্রাস করে, তখনই সে একটা হিংস্র বাঘ হয়ে যায়, হয়ে যায় একটা বাঘ মানুষ। একটা লোভী মানুষের বাঘ হয়ে ওঠার গল্পই বইটির মূল উপজীব্য। মূল মণিপুরি পৌরাণিক লোককথা “কেইবু কেই ওইবা”কে আশ্রয় করে এই রহস্য উপন্যাসের গল্প আবর্তিত হয়েছে। আশা করছি, যারা মণিপুরি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে নতুন কিছু জানতে আগ্রহী, এই রহস্য উপন্যাসটি তাদের ভিন্ন স্বাদের আনন্দ দেবে।’
লুৎফর হাসানের ‘টাইপ-সি’
গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা মিলিয়ে ৩০-এর বেশি বই লিখেছেন সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান। এবার তিনি প্রকাশ করেছেন উপন্যাস ‘টাইপ-সি’। বইটি নিয়ে লুৎফর হাসান জানান, উদ্ভ্রান্ত ঝড়ের মতো হঠাৎ গ্রামের মানুষের জীবনে যুক্ত হয়েছে ডিভাইস ও ইন্টারনেট আসক্তি। সরল জীবনে বৈশ্বিক উন্নতি অতিক্রম করে সেখানে দখল নিয়েছে বিভিন্ন পাপাচার। ভিডিও করে ব্ল্যাকমেলের জালে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকে। তারই এক ট্র্যাজেডি উঠে এসেছে টাইপ-সি উপন্যাসে।
আরও বই
অভিনেতা ফারুক আহমেদ ইদানীং বই নিয়েও হাজির হচ্ছেন মেলায়। ‘স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ’ ও ‘আমার না বলা কথা’র পর এবার তিনি নিয়ে এসেছেন ‘হাউ মাউ খাও’। প্রকাশ পেয়েছে মিজান পাবলিশার্স থেকে।
গায়িকা সাজিয়া সুলতানা পুতুল নিয়মিত লেখেন। আগেও কয়েকটি বই এসেছে তাঁর। এবারের মেলায় প্রকাশ করেছেন উপন্যাস ‘শিল্পীসত্তার ব্যবচ্ছেদ’। প্রকাশ পেয়েছে অনন্যা প্রকাশনী থেকে।
সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার প্রকাশনার সঙ্গেও যুক্ত। তাঁর আজব প্রকাশনী থেকে প্রতিবছরই বিভিন্ন লেখকের একাধিক বই প্রকাশ পায়। অন্যদের লেখা প্রকাশের পাশাপাশি নিজের বইও প্রকাশ করেন জয় শাহরিয়ার। এবার তিনি নিয়ে এসেছেন তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সুর ছাড়া কবিতারা’। এতে ৫৩টি কবিতা রয়েছে।
গীতিকার ও নির্মাতা ওয়ালিদ আহমেদের লেখা দুটি বই আসছে এবারের মেলায়। ভালোবাসা, অনুভূতি ও জীবনের নানা রঙের সংমিশ্রণে লেখা গান ও কবিতার সংকলন ‘দূরে গোধূলি’ এবং উপস্থাপনা, রেডিও-টিভি প্রেজেন্টেশন ও আত্মবিশ্বাসী কথা বলার কৌশল নিয়ে লেখা ‘কথার জাদু’। ধ্রুপদী পাবলিকেশনসের স্টলে পাওয়া যাবে বই দুটি।