চলতি শীত মরসুমে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে পেটের পীড়ার ঘটনা বাড়ছে। মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৫ ডিসেম্বরের সপ্তাহে নরোভাইরাসের ৯১টি প্রাদুর্ভাব নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছিল ৬৯টি। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এই খবর জানিয়েছে।
গত কয়েক বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নরোভাইরাসের সর্বাধিক ৬৫টি প্রাদুর্ভাবের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়।
নরোভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলো হঠাৎ বমি এবং ডায়রিয়া হওয়া। এর প্রাদুর্ভাব প্রায়ই ক্রুজ জাহাজ, নার্সিং হোম ও কারাগারের মতো সমবেত জীবনযাপনের পরিস্থিতিসহ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলে দেখা যায়।
নরোভাইরাস কি?
যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যজনিত অসুস্থতার প্রধান কারণ নরোভাইরাস। সিডিসি জানায়, প্রতি বছর দেশে হওয়া এই ধরনের সংক্রমণের ৫৮ শতাংশের জন্য দায়ী এই ভাইরাস।
নরোভাইরাস সংক্রমণ একদল ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়, যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১০টির মতো ভাইরাল কণা যে কোনও ব্যক্তিকে অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রে নোরোভাইরাসের বার্ষিক প্রায় ২ হাজার ৫০০টি প্রাদুর্ভাবের রিপোর্ট করা হয়। সেগুলো সারা বছরই ঘটতে পারে। তবে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা দেখা যায়।
বমি ও ডায়রিয়ার পাশাপাশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো: বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং জ্বর।
যেভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়
অধিকাংশক্ষেত্রে নোরোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে সংক্রামিত মানুষের থেকে সরাসরি অন্যদের শরীরে ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যমে। যেমন: একই পাত্র ব্যবহার করে খাবার গ্রহণ। এছাড়াও, খাদ্য, পানি বা দূষিত পৃষ্ঠের মাধ্যমেও এর প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে।
সংক্রমিত ব্যক্তি যতদিন অসুস্থ থাকেন?
নরোভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট অসুস্থতা সাধারণত হঠাৎ করেই শুরু হয়। এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ১২ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর লক্ষণগুলো বিকাশ করে। অধিকাংশ মানুষ এক থেকে তিন দিনের মধ্যে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে যান।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর এক কোটি ৯০ লাখ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ নানা রোগে অসুস্থ হন। এর মধ্যে নরোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বার্ষিক গড়ে ৯০০ জন মারা যান। একই সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক লাখ ৯ হাজার জন। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই ৬৫ বছর বা তারও বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
এ ছাড়া, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গড়ে প্রতি বছর ৪ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা
সব বয়সের মানুষ নরোভাইরাসে সংক্রমিত এবং অসুস্থ হতে পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অল্পবয়সী শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। বমি ও ডায়রিয়া থেকে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া শীর্ষ উদ্বেগের বিষয়।
নরোভাইরাসের চিকিৎসায় কোনও ওষুধ নেই। রিহাইড্রেশন রোধে কফি, চা ও অ্যালকোহল বাদ দিয়ে পানি ও অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন এমন যে কারো ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া উচিত। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব কম হওয়া, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘোরান।
ডিহাইড্রেশনে ভোগা শিশুদের অস্বাভাবিক ঘুম হতে পারে বা তারা বেশ উচ্ছৃঙ্খল হতে পারে। এ ছাড়া কান্নার সময় তাদের হয় চোখ দিয়ে অল্প পানি পড়ে বা কোনও পানিই পড়ে না।
যেভাবে নরোভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে
নরোভাইরাস প্রতিরোধে ভালোভাবে এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার বিকল্প নেই। খাবারের আগে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান ও উষ্ণ জল দিয়ে হাত ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।