Homeদেশের গণমাধ্যমেবন্যার কবলে ভিটেমাটি হারিয়ে পাঁচ মাস ধরে তাঁবুর নিচে তারা

বন্যার কবলে ভিটেমাটি হারিয়ে পাঁচ মাস ধরে তাঁবুর নিচে তারা


কুমিল্লার তিতাসে বন্যার কবলে গোমতী নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁবুর নিচে বসবাস করছে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাদশা মিয়ার পরিবার। ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরে যা পায়, তা দিয়েই কোনোভাবে জীবনযাপন করছে ওই পরিবারটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি, কলাকান্দি ও নারান্দিয়া ইউনিয়নের গোমতীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়।

গোমতীর প্রবল স্রোতে নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে আরও অর্ধশত পরিবার। ঘরবাড়ি হারিয়ে অধিকাংশ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও এখনো অন্যের বাড়িতে তাঁবু টানিয়ে থাকেন বাদশা মিয়া। মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে।

বাদশা মিয়া (৩৯) উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ের মৃত আবদুল মতিনের ছেলে।

সরেজমিন নারান্দিয়া পশ্চিম পাড়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে মজিব নামে একজনের পরিত্যক্ত পাকা ভিটায় বাঁশ ও ত্রিপল (তেরপল) দিয়ে তাঁবু টানিয়ে এর নিচে বসবাস করছেন বাদশা মিয়া। তাবুর নিচে দেখা গেল নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। নদীর পাড়ে বাঁধা একটি ছোট কোষা নৌকা, নৌকার মাচায় ছিপ-বড়শি, ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে যে অর্থ পান তা দিয়েই বাজার সদাই করতে হয়।

বাদশা মিয়া বলেন, আগে নদীর পাড়ে থাকতাম। নদীতে আমার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এখন আরেকজনের জায়গায় তাঁবু টাঙিয়ে আছি। নৌকাটা দিয়ে নদীতে ছিপ-বড়শি ফেলে মাছ ধরি। মাছ বিক্রি করে যা পাই, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই মাঝেমধ্যে ডেকোরেটরের কাজসহ সামনে টুকটাক যে কাজ পাই তাই করি। প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁবুর নিচে থাকি।

তিনি বলেন, আমার দুটি মেয়ে, একটার তিন বছর, আরেকটার এক বছর। মেয়েদের নিয়ে শীতকালে একটু সমস্যা হচ্ছে। ১৫ শতক জায়গা ছিল, এখন জায়গাটা নেই। নদীতে ভেঙে গেছে। এখন কোথায় থাকব, কী করব, সেই চিন্তায় আছি।

বাদশা মিয়ার বড় ভাই তোতা মিয়া বলেন, গোমতী পাড়ে বাদশার বাড়িঘর ছিল। বন্যায় বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ওই পাড়ের একজনের এই বাড়িটা পড়ে ছিল। আপাতত এখানে তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অল্পকিছু ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। তবে এমন সহায়তা পায়নি, যা দিয়ে কিছু করতে পারবে।

এই প্রতিবেদককে দেখে কয়েকটি বাঁশ, টিন আর গাছের ডালপালা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ঢেরার ভেতর থেকে তসবি হাতে বেরিয়ে আসেন বাদশা মিয়ার প্রতিবেশী নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জোহরা আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাড়িঘর নদীয়ে ভাইঙা লাইছে। আমার থাহার জায়গা নাই। ঢেরা বানাইয়া থাহি। বাড়িঘর ভাইঙা তছনছ অইয়া গেছেগা।
নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আরিফুজ্জামান খোকা বলেন, বন্যার কবলে বাড়িঘর, কবরস্থান, বিভিন্ন স্থাপনাসহ নারান্দিয়া গ্রামের গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পানি কমার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘরগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া মমিন বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠিয়েছি। এখনো বরাদ্দ আসেনি। ক্ষতিগ্রস্ত সবারই নাম দিয়েছি। বাদশা মিয়ার যদি কোনো আবাসস্থল না-ই থেকে থাকে, তাহলে তো উনি ভূমিহীন। আমাদের কাছে আবেদন করলে পরবর্তী সময়ে আমরা সুযোগ পেলে পুনর্বাসনের চেষ্টা করব।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত