Homeদেশের গণমাধ্যমেতরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলালেন পাসপোর্ট অফিসের দৃশ্যপট

তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলালেন পাসপোর্ট অফিসের দৃশ্যপট


একসময় পাসপোর্টের আবেদন করে ঘুরতে হতো দিনের পর দিন। ভোগান্তির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের হতে হতো হেনস্তার শিকার। আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময় এক ঝাঁক তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলে দিয়েছেন সেই দৃশ্যপট।

মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেই সেবা এখন একদিনেই পাচ্ছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা। কোনো দালাল ছাড়াই নিজের কাজ নিজে করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করছেন পাসপোর্ট আবদনকারীরা।

পাসপোর্টের আবেদন করা থেকে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয় অনলাইনে। তারপরও এতদিন চিহ্নিত কিছু দালালের কব্জায় ছিল মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবা। আবেদনের পর বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার সিরিয়াল পেতেই ঘুরতে হয়েছে দিনের পর দিন। রেমিটেন্স যোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেক বেশি। একসময় দালালদের মাধ্যমে আবেদন করা ছিল অলিখিত বাধ্যবাধকতা। আর এভাবেই দালাল চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিত সেবা প্রত্যাশীদের অনক টাকা। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন দালালমুক্ত। নিজের আবেদন নিজে করে একদিনেই পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা ছবি তোলাসহ আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে পারছেন।

সরেজমিনে কয়েকদিন মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, আবেদন জমা দেওয়ার কাউন্টারে সেবা প্রত্যাশীদের সুশৃঙ্খল লাইন। একই দিনে স্বল্প সময়ের মধ্যে আবেদন জমা দেওয়া ও বায়োমেট্রিকসহ সব কাজ সম্পন্ন করে সেবা প্রত্যাশীরা প্রফুল্ল চিত্তে অফিস ত্যাগ করছেন। আর সেবা প্রত্যাশীদের সেবা নিশ্চিত করার তদারকিতে অফিস প্রধান সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান নিজেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি আবেদন জমা পড়ে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেন মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রেকর্ড কিপার সোহল রানা।

জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসে সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমাতে এসএমএস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন এ সেবায় পাসপোর্ট আবদনর নানা ত্রুটি ও পাসপোর্ট গ্রহণের বার্তা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। আগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে বার্তা গেলেও অনেক সময় তা পেতেন না গ্রাহকরা। এখন অধিদপ্তরের মেহেরপুর কার্যালয়েও শুরু হয়েছে এই এসএমএস সেবা কার্যক্রম। বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে মোবাইল নম্বর সিলেক্ট করে, সেবা গ্রহীতাদের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। মেসেজ পেয়েও যারা আসছেন না, তাদের ফোন করে ডেকে আনা হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসে। এতে দালাল চক্রের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।

কথা হয় পাসপোর্ট করতে আসা কামদেবপুর গ্রামের ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আবেদন জমার ২ ঘণ্টার মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ নেওয়াসহ আমাকে স্লিপ দিয়ে দিয়েছে। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই সব কাজ সম্পন্ন করতে পারায় ভালো লাগছে।

মেহেরপুর সদর উপজলার রায়পুর গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই আবদন জমা দিয়ে, মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে পেরেছি। এটা আমার কাছে বিস্ময়কর লাগছে।

পাসপোর্ট অফিসের গেটের বাইরে কথা হয় মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি এক সপ্তাহ আগে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার পুরোনো একটি পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে সেই তথ্য গোপন করেছিলেন। এজন্যই তাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে ফোন করে ডেকে আনা হয়েছে, আগের পাসপোর্ট হারানো সংক্রান্ত জিডির কপি জমা দেওয়ার জন্য।

পাসপোর্ট অফিস চত্বরেই কথা হয় নওশাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে পাসপোর্ট করার আবেদন করেছিলাম। আবেদন পত্রে আমার বাবা ও মায়ের নাম ভুল থাকায় আজ আমাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে ডেকেছিল। আমার সব কাগজপত্র দেখে অফিস থেকেই সেগুলি ঠিক করে দিয়েছে।

সেবা প্রত্যাশীদের বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত বাবুল আক্তার কালবেলাকে বলেন, আমাদের দৈনিক ১০০টি বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করার সক্ষমতা আছে। তবে এখন প্রতিদিন ৬০-৭০টি আবেদন জমা পড়ে। যেগুলি আমরা দুপুর ২টার মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলি। এরপর আমাদের অফিস প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। সেবা পেয়ে মানুষ যখন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, সেটি আমাদের অন্যরকম একটি প্রশান্তি এনে দেয়।

মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান কালবেলাকে বলন, আমি মেহেরপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ২ মাস আগে এসেছি। আমার অফিসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে এসে নাগরিকদের যেন ভোগান্তি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। আবদনকারীদের ভোগান্তি কমাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশন আমরা আমাদের অফিস থেকেই করি। সেবা প্রত্যাশীদের এখন আর বাইরে যাওয়া লাগে না। আর যদি আবেদন ফর্মে কোনো ভুল থাকে, কারেকশনের প্রয়োজন হয়, আবেদনকারীর কনসার্ন নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সেটা কারেকশন করে দেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৯৫% কেসেই আবেদনকারীরা টাইমলি পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। ৪-৫% কেসে টাইমলি পাচ্ছে না। সেটা পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সময়মতো না আসার কারণে। দেখা যায়, আবেদনকারী আবেদনপত্রে ভুল তথ্য দিয়েছেন অথবা আগের পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলে সেই তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন। এসব ক্ষেত্রে পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়।

সর্বোপরি, জরুরি চিকিৎসা কিংবা প্রবাসে কর্মের তাগিদে বেশিরভাগ মানুষ পাসপোর্ট করে থাকেন। তাই সময়োপযোগী আরও সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের পূর্বের সব বদনাম ঘুচে যাবে, এমনটিই প্রত্যাশা সেবা নিতে আসা ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত সবার।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত