বিএনপি একটি দাবি তোলার পাঁচ দিন পর সারদায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আড়াই শতাধিক এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৭ অক্টোবর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে, পুলিশ প্রশাসনে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিদায় নেওয়ার পূর্বে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে মোট ৮০৩ জনকে নিয়োগ প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২০০ জনের বাড়ি গোপালগঞ্জ এবং ৪০৩ জনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারীদের হত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য।’ তিনি এসব পুলিশ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিলের দাবি তোলেন।
ঢাকায় র্যাবে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মতে, কেউ আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন অর্থাৎ ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন) সঙ্গে অতীতে যুক্ত ছিলেন, সরাসরি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও পরিবার বা ঘনিষ্ঠ স্বজনদের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বা সমর্থক ছিলেন, তাঁদেরই আসলে বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি এটাও বললেন, পুলিশ ভেরিফেকিশনের সময় এমন ঘটনাও ঘটে—কারও ক্ষেত্রে হয়তো রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, কিন্তু ভেরিফিকেশন করতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে এবং পরে যাতে জবাবদিহি করতে না হয়, তখন নিজে থেকেই প্রার্থীর যাচাই–বাছাইপত্রে লিখে দেন—প্রার্থীর পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক বা তারা আওয়ামী লীগের ভোটার।
অনেকের ক্ষেত্রে এমনটিও দেখা যায়, নিজেরা হয়তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে না, কিন্তু এলাকার বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কারও সুপারিশে সেই বাধা পার হয়ে গেছেন।
এককথায় ধারণা করা যায়, এসআই ব্যাচটির যাদের ক্ষেত্রেই নথিপত্রে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট কিছু দেখা গেছে, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা একজন ভুক্তভোগী বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরুর দিকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে পরে রাজনীতি থেকেও দূরে সরে এসে টিউশনি বা কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং হল ছেড়ে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। পরে ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হন। সারদায় তাঁর ব্যাচে যোগ্যতাগুণে শীর্ষ প্রশিক্ষণার্থীদের একজন ছিলেন তিনি।