Homeদেশের গণমাধ্যমেএকাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর: মোদিকে ইতিহাস ‘স্মরণ’ করাল ঢাকা

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর: মোদিকে ইতিহাস ‘স্মরণ’ করাল ঢাকা


এবারের বিজয় দিবসের দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক বিতর্কিত টুইট করেন। তাতে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে একাত্তরের বিজয়কে কেবল ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে দাবি করেন।

মোদির বক্তব্যের পাল্টায় তার দেশেরই সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জে এন দীক্ষিতের লেখার উদ্ধৃতি টেনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস মনে করিয়ে দিল বাংলাদেশ সরকার।

আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফেসবুক পেজে ‘ইতিহাসের তথ্য’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছে।  সেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কী হয়েছিল, তার বর্ণনা রয়েছে। ভারতের ‘ঐতিহাসিক ভুল’ তুলে ধরা হয়ছে জে এন দীক্ষিতের লেখা থেকে। অবশ্য মোদির বক্তব্যের বিষয়ে তাতে কিছু বলা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐতিহাসিক তথ্যের পোস্টে জে এন দীক্ষিতের ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির বর্ণনায় বলা হয়েছে,  “দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ৯ মাসব্যাপী নৃশংস যুদ্ধ সহ্য করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তার দীর্ঘকালের লালিত বিজয় অর্জন করে। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রয়াত জেএন দীক্ষিত তার ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড: ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশন্স’ বইয়ে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের যৌথ কমান্ডের বাংলাদেশের সেনাপতি এমএজি ওসমানীকে উপস্থিত করতে এবং স্বাক্ষরকারী করতে না পারাটা ছিল ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একটি বড় রাজনৈতিক ভুল ও ব্যর্থতা।”

লেখার ধারাবাহিক বর্ণনায় রয়েছে, “তার অনুপস্থিতির আনুষ্ঠানিক অজুহাত ছিল যে তার হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ন করেছিল কিন্তু আত্মসমর্পণের সময়সূচি অনুযায়ী ঠিকমতো ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু ব্যাপক সন্দেহ ছিল যে তার হেলিকপ্টারটি ভুল পথে পাঠানো হয়েছিল, যাতে তিনি সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে না পারেন এবং অনুষ্ঠানে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ভারতীয় সামরিক কমান্ডারদের ওপর রাখা হয়। এটি একটি ‘দুর্ভাগ্যজনক স্থখন’ ছিল, যা ভারত এড়াতে পারত। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ওসমানীর উপস্থিতি অনেক রাজনৈতিক ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ভারতকে সাহায্য করতে পারত, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল।” 

বর্ণনায় শেষভাগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোদিকে জবাব দিয়েছে এভাবে- “১৯৭১ সালের গৌরবময় বিজয়ের উদযাপন আমরা করি; আমরা উদযাপন করি সত্যের।”

বিজয় দিবসে যা লিখেছিলেন মোদি

বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য ও বীরত্বের অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ১৬ ডিসেম্বরকে পাশ কাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদানকে বড় করে বাংলাদেশের বিজয়কে ভারতের জয় দাবি করেন মোদি। 

১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের আগে লাখ লাখ নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে এবং ১ কোটি বাংলাদেশিকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।

১৬ ডিসেম্বরকে স্মরণে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে টুইট করেন, তা বাংলাদেশের মানুষের মনে আঘাত করে। টুইটে তিনি লেখেন, “আজ, বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে সাহসী সৈন্যদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের দেশকে রক্ষা করেছে এবং গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনে তাদের অসাধারণ বীরত্ব এবং তাদের অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে গভীরভাবে গাঁথা থাকবে।”

পূর্বাপর

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস নিয়ে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ভারতকে জানানোর কথা বলেছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘উনি (নরেন্দ্র মোদি) তার মতো করে একটা জিনিস বলেছেন, আমরা আমাদের মতো করে বলব।’’

তবে মোদির বক্তব্য নিয়ে আইন উপদেষ্টা যে মন্তব্য করেন, সেটিকে তার ব্যক্তিগত মতামত বলে তুলে ধরেছিলেন তৌহিদ হোসেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কথার পরদিন বুধবারই মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হলো একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনাবলি নিয়ে ভারতের জে এন দীক্ষিতের লেখার একটি অংশ, যাকে মোদির বক্তব্যের পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা যায়। 

মোদির বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ নিয়ে গণমাধ্যমও সরব রয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের টানাপোড়েন চলছে। দেশটির আশ্রয়ে রয়েছেন পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নিয়ে অস্বস্তির মধ্যেই মোদির বিতর্কিত মন্তব্য আসে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত