ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের রাজধানীর বনানীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। একই রাতে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
গত বুধবার রাতে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে ওই রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেড় শতাধিক স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সেলিম, লিটন, মইন ইউসহ আরও কয়েকজনের বাড়ি ভাঙচুর
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে বনানীতে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। একই রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌর এলাকায় সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ওই রাতেই খুলনার দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পৈতৃক সম্পত্তিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাসভবনের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙা হয়।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাতিজা যুবলীগ নেতা শরীফ কামালের রিসোর্ট ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয় জনতা। গতকাল দুপুরে সদর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের ‘হাওর রিসোর্টে’ এ ঘটনা ঘটে।
রোজপুরের নাজিরপুর সদরে বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ভাই নূরে আলম সিদ্দিকী শাহিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারেফ হোসেন খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কান্তি বিশ্বাসের বাড়ি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। একই রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পরে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল কবীর রতনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেও গভীর রাতে আওয়ামী লীগ নেতার কমিউনিটি সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো দলীয় কার্যালয়
গতকাল সকাল ১০টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ ও জাসদ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শেষে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এবং উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শেখ মুজিবের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
বাড়িঘর বুলডোজারে ভাঙার হুমকি কৃষক দলনেতার
বুলডোজার দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আখিরুজ্জামান মাসুম। গতকাল সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে মাসুম লেখেন, ‘ভাঙ্গুরায় আওয়ামী লীগের যেসব দালাল এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলছে, তাদের বাড়ি বুলডোজার কর্মসূচির আওতায় পড়বে এবং তাদের দেখামাত্রই প্রতিহত করা হবে।’
ম্যুরাল ভাঙার ঘোষণা প্রত্যাহার
নওগাঁর ধামইরহাটে আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ শেখ মুজিবের ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার ‘ধামইরহাট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তবে গতকাল দুপুরে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ধামইরহাট শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রিফাতুল হাসান চৌধুরী সৈকত বলেন, ‘কোনো একটি পক্ষ আমাদের সঙ্গে মিশে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছিল। তাদের কাজই হলো কোনো দল বা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। তারা যেন সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারে এবং সেই সঙ্গে জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কোনো সম্পদের ক্ষতি করতে না পারে, এ কারণেই আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’