Homeজাতীয়সরকারি মাঠে খেলতে ৮ হাজার টাকা

সরকারি মাঠে খেলতে ৮ হাজার টাকা


কাজের ব্যস্ততায় একমাত্র ছেলেকে তেমন সময় দিতে পারেন না সরকারি চাকুরে সায়মা মুসলিমীন। তাই ছেলের বিনোদনের জন্য বেছে নিয়েছেন খেলার মাঠ। রাজধানীর গুলশান এলাকার বাসিন্দা সায়মা ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’-এর ব্যবস্থাপনায় থাকা সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মাঠে পাঠান সন্তানকে। কিন্তু এ জন্য ক্রমবর্ধমান ব্যয় তাঁর জন্য রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এককালের সর্বসাধারণের জন্য থাকা মাঠটিতে একপর্যায়ে ফি দিয়ে খেলার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সম্প্রতি সেই ফি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহারের ফির নামে অস্বাভাবিক হারে অর্থ আদায়ে সায়মাসহ এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।

‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’-এর ওয়েবসাইট ঘেঁটে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির সময় মাঠ ব্যবহারের জন্য নামমাত্র একটি ফি নির্ধারিত হয়। এখন তা বাড়িয়ে অধিকাংশ মানুষের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বছরখানেক ধরে ক্রিকেট খেলার জন্য পরিশোধ করতে হয় দুপুরে ৩ হাজার টাকা আর বিকেলে ৪ হাজার টাকা। দেড় ঘণ্টা ফুটবল খেলার জন্য দুপুরে ৫ হাজার টাকা এবং বিকেলে ৮ হাজার টাকা লাগে। ৪৫ মিনিট টেনিস খেলার জন্য দুপুরে হলে ৮ হাজার টাকা আর বিকেলে হলে ১০ হাজার টাকা। সুইমিংপুল ব্যবহারের জন্য ভর্তি হতে লাগবে ৫ হাজার টাকা। প্রতি ঘণ্টা পুল ব্যবহারের জন্য গুনতে হবে ৭০০ টাকা।

যেভাবে নাগরিকের ‘হাতছাড়া’ মাঠ

এলাকার কয়েকজন স্থায়ী ও পুরোনো বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বসাধারণের এ মাঠটি মূলত ডিএনসিসির সাবেক মেয়র ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলামের হাত ধরে স্থানীয় এলিট শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে মাঠে সাধারণ মানুষের খেলাধুলার অধিকার ক্ষুণ্ন হতে থাকে। এখন বিনা মূল্যে মাঠের একাংশে সকাল-সন্ধ্যার হাঁটাহাঁটি ছাড়া সাধারণের জন্য কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া বাইরের কাউকে সাময়িকভাবে ভাড়া দেওয়ার কারণে মাঝে মাঝেই সাধারণ মানুষ মাঠ ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন, গত ১৯ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘স্পোর্টস ফেস্ট উল্লাস’ নামের একটি ইভেন্টের জন্য মাঠ ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। এসব কারণে টাকা দেওয়ার পরও সব সময় নির্বিঘ্নে মাঠ ব্যবহারের নিশ্চয়তা নেই। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এসব বিষয় নিয়ে কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করারও সুযোগ নেই তাঁদের।

রাজউক ও ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত পার্ক তথা খেলার মাঠটির আয়তন ৯ একরের মতো। রাজউক থেকে জায়গাটি ডিএনসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ডিএনসিসি প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এর একাংশে নানা রকম খেলার আধুনিক ব্যবস্থা করে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করে। এ মাঠে আছে টেনিস কোর্ট, ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট, বাস্কেটবল মাঠ, জিমনেশিয়াম, স্কেটিং জোন, লেডি’স কর্নার, অ্যাডভেঞ্চার হাট (খোলা জায়গা) ইত্যাদি। রাজউক জায়গাটি সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার পর মাঠের ব্যবহার নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়। এর পর থেকে ধীরে মাঠের নিয়ন্ত্রণ ক্লাবটির হাতেই চলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তা ধীরে ধীরে ‘সংরক্ষিত’ এলাকায় পরিণত করে।

আদালতের রায় উপেক্ষিত

এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, মাঠটির দখল নিতে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব কর্তৃপক্ষ অনেক আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা করে আসছিল। রাজউক মাঠটি তাদের মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় পার্কের জায়গা থেকে অনুপ্রবেশকারী ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছিল। ওই নোটিশের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের মার্চে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট ওই রিট আবেদনের রায়ে বলেন, পার্কের জায়গা দখলের কোনো আইনগত অধিকার ইয়ুথ ক্লাবের নেই। প্লটটি গুলশান মডেল টাউনের লে-আউট অনুযায়ী পার্কের জায়গা হিসেবেই চিহ্নিত। এটি পার্ক হিসেবে থাকবে। কোনো অবস্থাতেই প্লটে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পার্ক ছাড়া অন্য কোনো কাজে প্লট ব্যবহার করা যাবে না। উচ্চ আদালত পার্কটি পুনরুদ্ধার করারও নির্দেশ দেন। পার্ক রক্ষায় প্লটে থাকা সব অনুমোদনহীন কাঠামো ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ডিএনসিসির শীর্ষ পর্যায়ের মদদে প্রভাবশালী মহল ক্লাবের নামে নানা স্থাপনা করেছেন সেখানে।

আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ভুক্তভোগী সায়মা মুসলিমীন বলেন, ‘একে তো ইচ্ছেমতো টাকা নিচ্ছে; আবার এরই মধ্যে টাকা দিয়েও সব সময় খেলার মাঠে যাওয়া যাচ্ছে না। ক্লাবের নির্বাহী সদস্যদের নামে নানাভাবে বুকিং দিয়ে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ মাঠ এখন পুরোপুরি ইয়ুথ ক্লাবের লোকজনের ইচ্ছেমতো চলছে। অথচ এই মাঠ ও পার্কের উন্নয়নেই সরকারি কোষাগার থেকে সাড়ে ৮ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হুমায়ূন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবকিছুর বাজারমূল্য বেড়েছে। সেই হিসেবে আমাদের মাঠ ব্যবহারের ফি-ও বাড়াতে হয়েছে। এখানে লাভের জন্য কিছু করা হচ্ছে না। যা আয় হয় তা পার্ক ও মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে খরচ করা হয়। এরপরও এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি; যাতে মাঠ ব্যবহারের খরচ কিছু কমানো যায়।’

অন্যদিকে মাঠের মালিক ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘মাঠ নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ আসার পর আমরা তদন্তে নেমেছি। উচ্চ মূল্য আদায়ের অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এখন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত