Homeজাতীয়সংবিধান সংশোধনে জনগণের মত নিতে হবে: ড. কামাল হোসেন

সংবিধান সংশোধনে জনগণের মত নিতে হবে: ড. কামাল হোসেন


সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধান হলো জনগণের জন্য। জনগণই এটা হেফাজত করতে পারে। কোনো এক ব্যক্তি ভুল মনে করতে পারে। এক ব্যক্তি মনে করলেই সেটা ভুল না। পরিবর্তিত পরিস্থিততে নাগরিকদের যদি ঐকমত্য সৃষ্টি হয় তখন সেটা বলা যাবে সংশোধনী আনা দরকার। যেনতেনভাবে এটাতে হাত দেওয়া যায় না। কলমের খোঁচায় কেউ সেটি করতে পারবে না। জনগণের মতামত নিতে হবে। সংখ্যা গরিষ্ঠ মত পেলে তখন হাত দেওয়া যেতে পারে সংবিধানে।

সংবিধান দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এতে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা এমন একটি ঐকমত্য গড়ে তুলব। যাতে ভুল করলে সেটি তুলে ধরতে পারি। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। যখনই মনে হবে ভুল হচ্ছে, সরকারকে বাধ্য করতে পারি ভুল শুধরানোর ব্যাপারে।

তিনি বলেন, জনগণকে সক্রিয়ভাবে পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে। রাষ্ট্রকে কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, সংবিধানকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা না অপব্যাখ্যা–সেসব বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা না হলে ধরিয়ে দিতে হবে। সংবিধানের ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্ট করে। কোর্টও ভুল করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জনগণ যদি বুঝে ফেলে এটা ভুল হচ্ছে, যদি বৃহত্তর ঐকমত্য সৃষ্টি হয়, তাহলে ভুল হলে সেটি সঠিক করা যায়। সতর্ক জনগোষ্ঠীই হলো মূল শক্তি। জনগণ সতর্ক থাকলে সংবিধানকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে। সঠিক পথে রাখা যবে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, সংবিধান সংশোধন হবে না পুনরায় লেখা হবে–আমার কাছে মনে হচ্ছে এই বিতর্ক একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সামনে অনেক মেঘ দেখছি আকাশে। সেটি নির্বাচন পর্যন্ত। অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, নির্বাচন ব্যবস্থা বন্ধ হতে পারে। অনেকে মনে করছেন নতুন সংবিধান লিখবেন। এখন যদি সংবিধান সংশোধন বা পুনরায় লেখা হয় এটি অনুমোদন দেবে কে? ভবিষ্যৎ সংসদ? যদি না করে? তাহলে কি নির্বাচনের সময় ওদেরকে জেতাবেন? যারা এটি অনুমোদন দেবে? তাহলে তো ১৬ বছরের কষ্ট কষ্টই রয়ে গেল।

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, এই সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলেছে মার্শাল ল’ অবৈধ? চলে যাওয়ার পর বলেছে অন্যায় করেছে। গত ১৬ বছরে যা হওয়ার হয়েছে। এখন এগুলোর বিচার হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের সাহস থাকে না কেন? সুপ্রিম কোর্ট যদি সাহসী হতো তাহলে আজকে আমরা এই দুর্ভোগে পড়তাম না।

বিচারপতি নিয়োগে আইন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের সময় তৃতীয় শ্রেণি হলে আবেদন করতে পারবে না। মেধাবী দরকার। তারা জেলা জজ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আসে বিচারপতি হয়ে। আর এখানে অনেকে জজ কোর্টে সনদ নিয়ে সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে বা লন্ডনে চলে যায়। তারপর ফিরে এসে হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত হয়। তারপর হাইকোর্টের বিচারপতি হয়। কারণ আইন নেই। নিম্ন আদালতে তৃতীয় বিভাগ নিয়ে আবেদন করতে পারে না। আর এখানে দল করলেই হয়। সংবিধানে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলা আছে। কেন তারা পরাধীন থাকে? যে সরকার আসে সে সরকারকে তারা সহযোগিতা করে।

তিনি আরও বলেন, ১৬ বছর বিনা ভোটে বাংলাদেশ চলেছে। এখন সংস্কার করতে চায়। কি সংস্কার করবেন আপনারা? যারা ডিসি ছিল, ইউএনও ছিল, ভোট চুরি করতে সাহায্য করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন আপনারা? আজ ২–৩ মাস হয়ে গেছে। এদের শাস্তি দেন। শিক্ষকেরা প্রিসাইডিং অফিসার ছিল। এদের খুঁজে বের করেন। যে সরকার আসে তাদের সুবিধা মতো সংবিধান সংশোধন করে। একবার একজন ব্যক্তির জন্য সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে। কেন? সংবিধান তো দলিল।

ড. শাহদীন মালিক তার বক্তব্যে বলেন, সংবিধান সংস্কার নিয়ে যেসব কথা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে আরও একটা নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি। ৫২ বছরে আমার হিসেবে আমরা ১২ বার সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি। আর এবার হলে এটা হবে ১৩ তম বার। সংবিধান সম্পর্কে আমাদের ধারণা এখনো পরিপক্ব হয়নি।

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, অনির্বাচিত সরকার সংস্কার নয়, সুপারিশ করতে পারে। ক্ষমতা থাকতে হবে নির্বাচিত সরকারের হাতে। সংবিধানে এখনো অনেক জায়গায় ভুল রয়েছে গেছে। এ গুলোও ঠিক করা দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত চৌধুরী ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবসকে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সমালোচনা করেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ১০টি সংস্কার কমিশন করেছেন করেন, সংস্কার করেন। কিন্তু নীতিমালা হওয়ার আগে কীভাবে বিচারপতি নিয়োগ হলো? ১৫ জন বিচারপতি বিচারের বাইরে কিসের ভিত্তিতে? এগুলোর জবাব থাকা উচিত।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত