ভবন নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে অকোপেন্সি সার্টিফিকেট (ব্যবহার সনদ) আগেই দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার। এ ছাড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন বিধিমালা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের মেলা উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আগে ভবন নির্মাণের সময় পরিকল্পনা পাস হত। বাস্তবতার নিরিখে দুটি পরিকল্পনা পাস হয়। একটা রাজউক পরিকল্পনা আর একটা ওয়ার্কিং প্লান বা কাজের পরিকল্পনা। ওখানে একটা ভয় থাকত। যেকোনো কারণে হোক ওটা রেখে একটু সুযোগ নেওয়া হত। শেষ হওয়ার পর যখন অকোপেন্সি নেওয়া হত তখন সমস্যা হত। এখন নতুন বিধিমালায় বলা আছে ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার অনেক আগেই অকোপেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে। রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন ভবন নির্মাণের প্রতিটা স্তরে থাকবেন, পরিদর্শন করবে ও সই করবেন।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে বাড়ি নির্মাণে অনেক বছর সময় নেন। আবার ফ্ল্যাট নির্মাণ হলে হস্তান্তর করতে দেরি করেন। অতিরিক্ত অর্থ চান। এগুলো যেন না হয় সেটা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ড্যাপের যে বিধিমালার বিষয়, সেটা আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে। এরজন্য উপদেষ্টা কমিটিও করা হয়েছে। কাজ সব গুছিয়ে আনা হয়েছে। এগুলো সব অনলাইনে আছে। ২২ ডিসেম্বর এটার শেষ দিন ছিল। এরমধ্যে অনেক সভা হয়েছে। সেখানে অনেকের জোরালো বক্তব্য আছে। সেগুলো যুক্তিপূর্ণ। সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আর অসুবিধা হবে না।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রাজউকে যোগদানের পর রিহ্যাব তার সঙ্গে প্রথম দেখা করেছিল। রিহ্যাবের দাবি ছিল ড্যাপ ও বিধিমালা সংশোধন করা। মন্ত্রণালয় ও সরকার এই ব্যাপারটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
তিনি বলেন, বিধিমালা এমনভাবে করা হচ্ছে যে অকোপেন্সি সার্টিফিকেট, যেটা আগে অনেক সমস্যায় ছিল এবং অনেক জটিল ছিল ওই জিনিস অনেক সহজ করে আনা হচ্ছে। রাজউকের পক্ষ থেকে যে জটিলতা ছিল তা সহজ করা হচ্ছ। যেজন্য রাজউকের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দেরি হলে তারা দায়ী থাকবে। এবার ভবনে এয়ার কন্ডিশন লাগানো হবে সেটাও বলা হবে। এর সঙ্গে সুয়ারেজ পদ্ধতি কেমন হবে তা বলা হবে। ২০২৫ সাল থেকে ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানো হবে। ভবন যেন পরিবেশবান্ধব হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবছর রিহ্যাব মেলায় ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আবাসন শিল্প সংকটময় অবস্থায় আছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বৃদ্ধি। এসব কারণে সংকটে আছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের স্বার্থান্বেষী মহল করোনাকালীন সময়ে তড়িঘড়ি করে নামমাত্রা শুনানিতে গিয়ে মানুষের মতামত আমলে না নিয়ে ২০২২ সালে ২২ আগস্ট বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ প্রণয়ন করে। যার ফলে ঢাকা শহরের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে করে নগরবাসীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশমালা দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষায় আছি কবে সুরাহা হবে।
এবার রিহ্যাব মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের মেলায় মোট ২২০টি স্টল থাকছে। এ বছর সাতটি গোল্ড স্পন্সর, ১৮টি কো-স্পন্সর, ১৮টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১০টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় প্রবেশে সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন। এবারের মেলায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির পাশাপাশি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে।
২০০১ সাল থেকে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। এটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত রিহ্যাবের ২৬তম ফেয়ার। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৫টি ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রিহ্যাব। রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করে আসছে।
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্যে, দুবাই, ইতালির রোম, কানাডা, সিডনি, কাতারে ১টি করে এবং দুবাইতে ২টি রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল হাবিবুর রহমান, রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ এবং ফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক ও প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্ প্রমুখ।