সারা দেশে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ প্রসঙ্গ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোনও শয়তান যেন পালাতে না পারে। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে দেশের পরবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে তিনি এ নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুস্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এদেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, দলীয় বাহিনীর সন্ত্রাসী দিয়ে অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে। গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এক কথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে।‘
বর্তমানে সেই ফ্যাসিবাদী শক্তি বিগত ১৬ বছরে তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুস্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের’ মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে বলেও জানিয়েছেন
আইনজীবীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা আদালতে দায়েরকৃত প্রতিটি মামলার ধার্য তারিখে ও সময়ে উপস্থিত থাকুন। প্রসিকিউটিং এজেন্সির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ রাখুন। কোনোভাবেই যেন কোনও সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে আইজিপির টিম মামলাভিত্তিক অগ্রগতি নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে ১৫ দিন পরপর বসতে পারেন।
রাজনৈতিক বিরোধীদের নিধনের জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হাজার হাজার মামলায় নিরীহ, নিষ্পাপ সাধারণ মানুষকে আদালতের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বছরের পর বছর জেলে আটকে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিষ্পাপ মানুষকে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। এই অন্যায় আচরণের বিচার হয়তো একদিন হবে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী, মানুষের বুকে গুলি করে ঝাঝরাকারী, হ্যালমেট বাহিনী, দুস্কৃতিকারী, উসকানিদাতা, জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার করে আদালতে যাবে, আর তথ্যের সীমাবদ্ধতা কিংবা এজেন্সিগুলো ব্যর্থতার কারণে জামিন হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়বে; এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’