Homeজাতীয়আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উদ্বেগ-আতঙ্ক বেড়েছে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উদ্বেগ-আতঙ্ক বেড়েছে


অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশবাসী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করলেও ঘটেছে তার উল্টো। রাজধানীতে গত ৬ মাসে প্রায় সব সূচকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহে পাঁচবার পুলিশের ওপর হামলা ও দুটি থানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ছিনিয়ে নেওয়া হয় একাধিক আসামি।

ঢাকার অনেক এলাকায় এখন সন্ধ্যার পর মানুষ বাসার বাইরে বের হতে ভয় পায়। এই অবস্থায় কোনো কোনো এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অতিষ্ঠ মানুষ নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশ তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুলিশের আইনি দায়িত্ব পালনে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, ঢাকায় গত আগস্ট থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। আগস্টে রাজধানীর ৫০টি থানায় ৪টি ছিনতাইয়ের মামলা করা হলেও তা বেড়ে ডিসেম্বরে ৩৮টি হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারির ১৫ দিনেই ছিনতাইয়ের মামলা করা হয় ৩১টি।

প্রকৃত ছিনতাই আরও বেশি। কারণ ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ পথচারী মামলা করে না। আইনিপ্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ও হয়রানির আশঙ্কায় তারা মামলা করতে চায় না।

গত আগস্টে ঢাকায় চুরির মামলা করা হয়েছিল ৪৩টি। মাসে মাসে বেড়ে ডিসেম্বরে তা ১২৬টি হয়। এভাবে ডাকাতি ও নারী নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর আদাবরে সুমন শেখ নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাঁর মোবাইল ফোন ও টাকাপয়সা। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বৃহস্পতিবার সুমন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি শ্রমিক, আমাকে কাজের কথা বলে ডেকে নেয় কয়েকজন। পরে অন্ধকারে নিয়ে আমার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যেতে চায়। আমি বাধা দিলে আমার হাতে কোপ দিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে যায়।’

সুমনের জীবন রক্ষা পেলেও তিনি এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। হাত হারানোয় বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাঁর। কীভাবে পরিবার চালাবেন, সে চিন্তায় ডুবে থাকেন তিনি; আর কাঁদেন। এ ঘটনায় আদাবরের ছিনতাই চক্রের সদস্য টুন্ডা বাবু, রাজু, জনিসহ আরও কয়েকজন জড়িত। যাদের নামে মামলা করেছেন সুমন। তারা সবাই এখন পলাতক।

গত ডিসেম্বরে নবীনগর হাউজিংয়ের বাসিন্দা ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা মসজিদ এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছিনতাইয়ের ভয়ে এখন দামী মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ সঙ্গে রাখেন না তিনি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দারোয়ানের কাছে ওগুলো রেখে যান।

পুলিশের দাবি, রাজধানীর সীমান্তবর্তী থানাগুলোতে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ, দারুসসালাম, কামরাঙ্গীরচর, রূপনগর, শাহআলী, পল্লবী, ডেমরা, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী ও তুরাগ এলাকায় বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ জানিয়েছে, এসব এলাকায় বস্তি থাকায় সেখানে মাদক ও চোরাচালানকেন্দ্রিক অপরাধীরা থাকে, তারা অপরাধ করে ডিএমপি এলাকা থেকে বের হয়ে গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। তাই তাদের সহজে ধরা যায় না।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, নবীনগর হাউজিং ও তুরাগ হাউজিং এলাকায় রাতে চরমোনাই পীরের অনুসারীরা পাহারা দেন। তাঁরা বাঁশ হাতে পাহারা বসান।

রাজধানীর এসব এলাকার অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকায় পদায়ন পাওয়া নতুন পুলিশ। তারা অভিযানে গিয়ে প্রায়ই হামলার শিকার হচ্ছে।

এক সপ্তাহে দেশের পাঁচটি জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উত্তরার দুটি থানায় ভাঙচুর করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আটক ব্যক্তিদের ছাড়াতে এই হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ও টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কাশিমপুর কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, প্রতিটি ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।

৫ ফেব্রুয়ারি মাদক চোরাকারবারি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করতে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন বোটঘাট বস্তিতে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা চালায় অপরাধীরা। এতে চার পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরে ওই এলাকা থেকে যৌথ বাহিনী ২৩ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে। তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এ চক্রটি বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিনতাই করত বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান।

ওই ঘটনায় আহত মোহাম্মদপুর থানার এসআই শেখ আফজালুল হক দুদিন একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মোহাম্মদপুর থানার ৯ জনের একটি দল হাসান নামের এক ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করতে বোটঘাট মসজিদসংলগ্ন বস্তিতে গেলে ৫০-৬০ জনের একটি দল তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। হাসানকে আর গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘(পুলিশের ওপর হামলার) প্রতিটি ঘটনা আমরা তদন্ত করে দেখব। যারা এর জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশের ওপর হামলা রোধে মন্ত্রণালয় থেকে কী নির্দেশনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আইজি সাহেবের নির্দেশনা একেবারে স্পষ্ট। গত ১৫ বছর যে পুলিশ ছিল, ওই আচরণ তো আপনারা আবার চাচ্ছেন না।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত