সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। প্রধান উপদেষ্টা গাজার সঙ্গে তুলনা করেছেন, আপনারা সেখান থেকে বুঝে নিবেন কী অবস্থা, দেশের অবস্থা কেমন। এ মুহূর্তে কী গাজায় কেউ বিনিয়োগ করবে। একটা আরেকটার সঙ্গে লিংক।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন এখানে গাজার মতো অবস্থা। সব কিছু ভেঙে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থা আর্থিক খাতে বেশি। এ ধরনের ভঙ্গুরতা, ক্রাইসিস এর আগে দেশে দেখিনি। ইন্দোনেশিয়ায় যে ভঙ্গুরতা আমি দেখেছি, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল এশিয়ায় সেখানে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন সেক্টর অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এটা এখন আর লুকানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণা করলে জানতে পারবো না। আমাকে জানতে হবে নিজের অবস্থা।
তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিষয় আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করবো সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাবো, তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি প্রথমে একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই, সেটা হলো ভুয়া ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) যেতে চাচ্ছি। সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এটা ইমিডিয়েট প্রায়োরিটি। আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে, আমাদের ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর চলে গেছে। এটা অতি দ্রুত হারে বেড়েছে ২০১০ সাল থেকে। একই সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ যে রিসোর্সগুলো সেগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো ছিল। এখন ৭ শতাংশের নিচে। এটা নিচের দিকে গেছে, ওপরের দিকে যাওয়া উচিত ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমাদের যে পরবর্তী বাজেট আসবে তার রিসোর্স কোথায়? আমাকে যদি আরও ঋণ নিতে হয়, তাহলে আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এই রিসোর্স মোবিলাইজ করা খুব সহজ না। আমাদের উন্নতির মধ্যে শুধু আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে। আমরা মধ্যম আয়ে চলে গেছি। আয় যদি বাড়ে তাহলে তো সঞ্চয় হওয়ার কথা। সেগুলো গেলো কোথায়। সে অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলো গেলো কোথায়। তাই মানুষকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত করতে হবে। আমি ট্যাক্স দিবো না অথচ আশা করবো সরকার আমাকে সেবা দেবে।
এলডিসির জন্য যে সূচকগুলো ছিল সেগুলো কী সঠিক ছিল না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, মনে করুন সব সঠিক, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি কী? আমরা যে বাজার সুবিধাটা পাই সেটার ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এটা কমে ৬০ শতাংশে চলে আসা উচিত ছিল। এখানে আমাদের রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে বলছি আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবো। আজকে ২০২৫ সালে- এই ৭ বছরে আমাদের একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমলো না কেন?
তাহলে কী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন চাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে বসতে হবে। আমাদের পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি হয়েছে, দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসবো। তবে এখনই এটা বলতে পারবো না। তথ্যগত ভুল কতটুকু আছে সেটা আমাদের দেখতে হবে। আমাদের এই নিয়ে কমিটি হয়েছে। কমিটির প্রধান মুখ্য সচিব।
বাংলাদেশ চাইলেই কী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের হাতে পুরোপুরি না, তবে আমাদের অধিকার আছে, আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করবো সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাবো তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
অনেক দিন ধরে দেখছি বাংলাদেশে কোনও বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে প্রথম দিন হিসেবে আমার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আপনারা একটা সরকারকে বলছেন ইন্টেরিম। আমি যখন বিনিয়োগকারী হই তখন আমি চিন্তা করবো একটা ইন্টেরিম সরকারের দেশে বিনিয়োগ করবো কিনা। মূলত রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। আমরা রাজনীতির চিন্তা করতে গিয়ে অর্থনীতির চিন্তা করিনি।