রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি! শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এস্পানিওলের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর আনচেলত্তি রীতিমতো ফেটে পড়লেন। কারণ? ম্যাচের ৬১তম মিনিটে রিয়ালের তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের ওপর ভয়ংকর ট্যাকল করেও মাত্র হলুদ কার্ড দেখেছেন এস্পানিওলের ডিফেন্ডার কার্লোস রোমেরো। অথচ ম্যাচের নায়ক হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনিই গড়ে দিয়েছেন ব্যবধান!
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আনচেলত্তি রেফারি আলেহান্দ্রো মুয়নিজ রুইজ এবং ভিএআরের সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমতো চটেছেন।
‘এই সিদ্ধান্ত একেবারেই অবিশ্বাস্য! সবাই দেখেছে, এটা পরিষ্কার লাল কার্ডের ফাউল। এমন একটি বিপজ্জনক ট্যাকল করে খেলায় থেকে যাওয়া রীতিমতো রহস্য। ভাগ্য ভালো, এমবাপ্পে আহত হয়নি, কিন্তু ভিএআরের থাকার পরও এমন সিদ্ধান্ত… ব্যাখ্যা করা যায় না!’
আসলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই বিতর্কিত মুহূর্তই যথেষ্ট ছিল। কারণ, ৮৫তম মিনিটে সেই রোমেরোই এস্পানিওলের একমাত্র গোলটি করে রিয়াল মাদ্রিদকে ধাক্কা দিয়ে দেন, আর লিগের শীর্ষস্থান নিয়ে তৈরি হয় উত্তেজনা। এই হারে এক পয়েন্টের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ নিঃশ্বাস ফেলছে রিয়ালের ঘাড়ে।
ম্যাচ শেষে অবশ্য নিজের ফাউলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন রোমেরো। ‘আমি জানতাম, এমবাপ্পেকে দৌড়ে থামানো অসম্ভব। তাই যা করার, তা-ই করেছি। সত্যি বলতে, ট্যাকলটা একটু খারাপ ছিল, আমি সেটা পছন্দ করিনি। তাই ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছি,’ বলেন রোমেরো।
তবে এস্পানিওল কোচ মানোলো গঞ্জালেস তার খেলোয়াড়কে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, ‘ওটা কঠিন ট্যাকল ছিল ঠিকই, তবে উদ্দেশ্য ছিল কাউন্টার অ্যাটাক থামানো, এমবাপ্পেকে আঘাত দেওয়া নয়।’
রিয়াল শুধু রোমেরোর ফাউল নিয়েই ক্ষুব্ধ নয়। প্রথমার্ধে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলটি এমবাপ্পের ফাউলের কারণে বাতিল করা হয়, যা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আনচেলত্তি। ‘আমরা ভালো খেলেছি, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল আমাদের হাতে, ২০টি শট নিয়েছি, পোস্টে লেগেছে, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। ভিএআরের সিদ্ধান্তও আমাদের বিপক্ষে গেছে,’ হতাশা ঝরেছে তার কণ্ঠে।
এই পরাজয়ের সঙ্গে আরেকটি দুঃসংবাদ পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের ১৫ মিনিটেই ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়তে হয় দলটির অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগারকে। সামনে কোপা দেল রে কোয়ার্টার ফাইনালে লেগানেস, লা লিগায় অ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে মাদ্রিদ ডার্বি এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ – এই পরিস্থিতিতে রুডিগার-এর চোট রিয়ালের জন্য বড় ধাক্কা।
ইতোমধ্যেই রিয়ালের ডিফেন্সে ইনজুরি সমস্যা প্রকট। দানি কারভাহাল ও এডার মিলিতাও আগে থেকেই বাইরে, ডেভিড আলাবা সদ্য চোট থেকে ফিরেছেন। এখন ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হওয়ার আগে রিয়াল নতুন কোনো সাইনিং করবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে।
‘রুডিগারের চোট নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। আমরা জানি, দলে কী প্রয়োজন এবং কী করতে হবে,’ জানিয়েছেন আনচেলত্তি।
রিয়াল মাদ্রিদের সামনে তাই এখন কঠিন সময়। বিতর্কিত হার, শীর্ষস্থান নড়বড়ে, ডিফেন্সে ইনজুরির ঝড় – সব মিলিয়ে দলকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। কিন্তু আনচেলত্তির দল পারবে তো এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে লিগ জয়ের মিশন টিকিয়ে রাখতে?