পুরো সপ্তাহ জুড়ে মাদ্রিদের গণমাধ্যম গর্জে উঠেছিল — এই ম্যাচ নাকি রিয়ালের ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও কামব্যাক সময়ের ব্যাপার। ‘কীভাবে জিতবে’ সেই আলোচনা যখন চলছে, তখন আর্সেনাল নীরবে নিজেদের প্রস্তুত করে নিচ্ছিল ইতিহাস লেখার জন্য। বার্নাব্যুর গ্যালারিতে হাজার হাজার সমর্থকের চিৎকার, উন্মাদনা আর সাদা শিবিরের আত্মবিশ্বাস — সবকিছু মিলিয়েও হারানো গেল না ‘গানার্স’দের।
উল্টো সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ২-১ গোলের জয় নিয়ে স্বাগতিকদের স্বপ্ন ভেঙে দিল আর্সেনাল। সামগ্রিকভাবে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিশ্চিত করলো চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের টিকিট। যেখানে রিয়াল মাদ্রিদের টাইটেল ডিফেন্স শেষ হলো কোয়ার্টার ফাইনালেই।
এদিকে ইউরোপের সেরার লড়াইয়ে আরেকটি রূপকথা লিখে ফেললো মিকেল আর্তেতার আর্সেনাল। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই ঐতিহাসিক সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ২-১ গোলে হারিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করলো গানার্সরা। আর সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) ম্যাচের শুরুতেই আগ্রাসী হয় স্বাগতিকরা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে নামে রিয়াল মাদ্রিদ। কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দুর্দান্ত কম্বিনেশন থেকে একবার বল জালেও জড়ায়। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়ে বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।
এরপর দশ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে মিকেল মেরিনোকে ফাউল করেন রিয়ালের ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিও। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু বুকায়ো সাকার নেয়া দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন থিবো কোর্তোয়া। মিস হওয়া পেনাল্টিতে হতাশ হলেও গতি হারায়নি গানার্সরা।
২৭ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদও একবার পেনাল্টি পেয়ে যায়। তবে ভিএআর দেখার পর রেফারি সিদ্ধান্ত বদলে নেন। প্রথমার্ধ শেষে গোলশূন্য সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় গল্প বিরতির পর একদম নতুন রূপে মাঠে নামে আর্সেনাল। ডেক্লান রাইস, মার্টিন ওডেগার্ড এবং মিকেল মেরিনোর চমৎকার সমন্বয়ে বল পেয়ে যান বুকায়ো সাকা। দারুণ ড্রিবল করে একেবারে একা দাঁড়িয়ে থাকা কোর্তোয়ার মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে অসাধারণ এক গোল করেন তিনি। ৫০ মিনিটে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় গানার্সরা।
গোল খাওয়ার ঠিক পর মুহূর্তেই আর্সেনাল ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবার ভুল পাস কেড়ে নেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। একক প্রচেষ্টায় গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি।
গোলের আশায় ৭৫ মিনিটে এমবাপ্পেকে তুলে নেন কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। পরিবর্তিত পাঁচ খেলোয়াড়ও মাঠে কোনো পার্থক্য গড়ে তুলতে পারেননি। উল্টো ৯০ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে দৌড়ে গিয়ে গোল করেন গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি। এই গোলের মধ্য দিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে গানার্সরা।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে পা রাখলো আর্সেনাল। এবার তাদের প্রতিপক্ষ পিএসজি। গানার্স ভক্তদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন — “এবার কি সত্যিই ইউরোপ সেরার মুকুট উঠবে নর্থ লন্ডনে?”