গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজধানীর বাজারগুলোতে টমেটোর কেজি উঠেছিল ২৯০ টাকা পর্যন্ত। এখন বাজারে সবচেয়ে ভালোমানের টমেটো ৩০ টাকা কেজি। রাজধানীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় এই অবস্থা হয়েছে। অনেক খুচরা বিক্রেতার দোকানে টমেটো নষ্ট হচ্ছে ক্রেতার অভাবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিন্টু গতকাল বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শীতের জন্য সম্প্রতি টমেটোর চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু বিপরীতে সরবরাহ বেড়েছে চার গুণ। এত টমেটো কেনার লোক কই! মাল পড়ে থাকলে লোকসানে হলেও বিক্রি করতে হয়। কারণ, টমেটো দ্রুত পচে যায়।’
গতকাল সেগুনবাগিচা বাজারে ভালোমানের টমেটো বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। মূলত নিম্ন আয়ের লোকজনের বসবাস, এমন এলাকার বাজারে দাম ছিল ১৫-২০ টাকা কেজি। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজি। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছে, পাইকারিতে টমেটোর দাম হওয়ার কথা ২৬ টাকা। এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাম্পার ফলন হওয়ায় ফুলকপি, মুলা ও আলুর ক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফলন বেশি হওয়ায় রাজশাহী, বাগেরহাটসহ অনেক এলাকার কৃষক ক্রেতা না পেয়ে হতাশ। খেত থেকে তুলে আড়ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে শ্রমিক ও পরিবহনের যে খরচ, টমেটো বেচে সেটা উঠছে না; লাভ পরের কথা। স্থানীয় আড়তে মাত্র দুই থেকে তিন টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করেছেন চাষিরা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিষয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টমেটোর উৎপাদন মাত্র কয়েক মাস হলেও চাহিদা থাকে সারা বছর। তারপরও ভালো সংরক্ষণব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমে ঠকেন কৃষক আর মৌসুম শেষে ক্রেতা। কারণ, তখন আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। এতে ক্রেতা টমেটো সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়ে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর ২০-৩৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। দেশে টমেটোর উৎপাদন এখন বছরে প্রায় ৫ লাখ টন। এর মধ্যে ২২ থেকে ২৫ হাজার টন বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক শিল্প কোম্পানি সস ও কেচাপ তৈরিতে ব্যবহার করে। বাকি টমেটো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারে যায়।
অন্যান্য পণ্যের দর
রাজধানীর বাজারগুলোতে শিম বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। লাউ, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ১৫-৩০ টাকা প্রতি পিস। কাঁচা মরিচের কেজি ৪০ থেকে ৭০ টাকা। পেঁয়াজের দাম আগের মতো রয়েছে। এখনো মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাজারে হালি পেঁয়াজ উঠলে দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজি। তবে আলুর দাম ২০ ফেব্রুয়ারির পর বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা। কারণ, তখন হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে।
ডিমের দাম আরও কমে ১২৫-১৩০ টাকায় নেমেছে। তবে মুরগির দাম কমছে না। কারণ, হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, লেয়ার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম থাকার কথা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা কেজি। সোনালির দাম ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের ডিম বিক্রেতা নূরে আলম বলেন, এবার শীত খুব বেশি না হওয়ায় মুরগি মারা গেছে কম। তাই ডিমের উৎপাদন বেশি। আর সবজির দাম কম হওয়ায় ডিমের চাহিদা কমেছে। এসব কারণে দাম কমেছে।