মিষ্টি বিক্রিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। তবে এর বিপরীতে এ খাতের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেন না। ইলেকট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহার করেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনের সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
আলোচনায় মিষ্টির ওপর ভ্যাট ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ননী গোপাল ঘোষ বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল, তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আপনি বলছেন ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে। এটা একটা আজগুবি কথা। আপনি ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশে বেশি হয়—এ রকম জাদুকরী দেশে বাস করলে তো হবে না।’
মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ইএফডি ব্যবহার করেন না উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা সমস্যা আছে। ভ্যাট দেন জনগণ। আমি যত মিষ্টি কিনেছি এই জীবনে, সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছি, কিন্তু আমার ভ্যাট সরকারের কোষাগারে আসেনি। আমার তো বহু বয়স হয়েছে। এই পর্যন্ত দেখলাম না যে কোনো মিষ্টির দোকানি আমাকে ভ্যাটের রিসিট দিয়েছেন। এই টাকা প্রোপারলি…হয়েছে, এটা দেখিনি।’
মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট ‘ইনক্লুসিভ’ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা মিষ্টির দামে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করব। ইনক্লুসিভ করব। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করছি। টোটাল ভ্যালুর ওপর ভ্যাট ধরব। ক্রেতার জানার দরকার নেই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই জিনিস আমরা সুপারশপে করেছি।’
যাত্রীবাহী নৌযানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থা। দাবির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘বর্তমানে এসি কেবিনের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট আছে। লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আগামী বাজেটে ভ্যাট মওকুফের অনুরোধ করেছি।’
এদিকে আলোচনায় স্থানীয় সোলার প্যানেল উৎপাদকদের ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) জেট ফুয়েলের ওপর আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি এবং উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর কর হ্রাসের প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচ গিয়ার ৬৫ শতাংশ কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়।
যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্তমানে যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে নিয়ে নেয়। এই ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনো কখনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলে সেটা দেয় না।’
আবদুর রহমান বলেন, ‘তাই আমরা চাচ্ছি, যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স যাত্রী নিজে দেবে। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান নেবে এবং সেটা দেখিয়ে চলে যাবে।’
আগামী বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক নীতি গ্রহণের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের এবারের বাজেটের মূল টার্গেট হচ্ছে, আমরা ট্রেড ফ্যাসিলিটেড করব। লুপহোলগুলো বন্ধ করব, আর যত পারি বৈষম্য কমাব।’