Homeঅর্থনীতিবিদেশিদের নজরে ডিজিটাল অর্থনীতি

বিদেশিদের নজরে ডিজিটাল অর্থনীতি


দক্ষিণ এশিয়ায় ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যা বিশাল এক সম্ভাবনার উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হলে দেশকে এখনই ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে হবে—এমন বার্তাই উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক খাতের নেতৃত্বে থাকা বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’-এর চতুর্থ দিনের আলোচনায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরাসরি আহ্বান জানান, দ্রুত একটি কার্যকর সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস করতে হবে, যাতে করে বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার পরিধি নিরাপদ ও টেকসইভাবে বাড়ানো যায়।

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, বিকাশ বাংলাদেশের সিইও কামাল কাদের, সিটি এশিয়া সাউথ পাবলিক সেক্টর সলিউশনসের প্রধান রোহিত জামওয়াল, মেটার বাংলাদেশ ও নেপালের পাবলিক পলিসি প্রধান রুজান সরওয়ার, আন্তর্জাতিক জননীতি ও সরকার সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক ইনফান ঝাং এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায়।

আলোচনা পর্বটি পরিচালনা করেন সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের ট্রেজারি ও ট্রেড সলিউশনস বিভাগের পরিচালক ও প্রধান মোহাম্মদ এ আখের।

সেমিনারে উঠে এল সম্ভাবনার সঙ্গে চ্যালেঞ্জও

‘নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে ডিজিটাল অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্যাংকিং ও সেমিকন্ডাক্টর খাতের বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা জানান, বাংলাদেশের আইটি খাত দ্রুত বড় হচ্ছে, কিন্তু নিরাপত্তাকাঠামো এখনো দুর্বল, যা বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় ফেলছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ। তিনি জানান, সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ তৈরির কাজ করছে। চলতি মাসের মধ্যেই একটি নতুন ও যুগোপযোগী আইন আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমরা সমাজের সব অংশের সঙ্গে পরামর্শ করে আইন প্রণয়নের কাজ করছি। ব্যবসায়িক পরিবেশে সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’

দেশি-বিদেশি নেতৃত্বে আশাবাদের ছোঁয়া

অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংক এনএর কান্ট্রি অফিসার মো. মইনুল হক বলেন, কোভিড-১৯-এর সময় ডিজিটাল ইকোনমি শুধু বিকল্প নয়, বরং অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, এই খাত মানুষের মধ্যে সংযোগ বজায় রেখেছে, ই-কমার্সকে শক্তিশালী করেছে এবং কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে।

মো. মইনুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান এআই ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হাবে পরিণত হওয়া। সেই সঙ্গে ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়নে বিশ্বসেরা ১৫ দেশের কাতারে আসা, ৭-৮ মিলিয়ন দক্ষ আইসিটি পেশাজীবী তৈরি, আইসিটি খাতে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা এবং স্টার্টআপ বিনিয়োগ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো।

গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, এই খাতে বিনিয়োগ মানেই লাভজনক ফলাফল—এটি শুধু দেশি নয়, বিদেশি উদ্যোক্তারাও জানেন।

আইটি ব্যবস্থাকে সহজ ও কার্যকর করার উদ্যোগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সহজ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই একাধিক কার্যক্রম শেষ করা যায়—এমন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এআই ও সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে উৎসাহ

বিকাশের সিইও কামাল কাদের বলেন, ‘আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে এআই ও সেমিকন্ডাক্টর বাজার কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশও এই বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে; কারণ, আমাদের সক্ষমতা ও বাজার—দুই-ই বাড়ছে।’

বিদেশি বিনিয়োগের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন

সিটি ব্যাংক এনএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এফডিআই মূলত টেক্সটাইল, ব্যাংকিং ও বিদ্যুৎ খাতে হলেও বর্তমানে টেলিকম খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।

দ্রুত নিরাপত্তাকাঠামো গড়াই মূল চাবিকাঠি

সেমিনারের আলোচকেরা একমত হন, ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণের জন্য এখন প্রয়োজন একটি দ্রুত, সুশৃঙ্খল এবং স্বচ্ছ সাইবার নিরাপত্তাকাঠামো। প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের পথে এগোতে হলে এই ভিত্তি এখনই গড়ে তুলতে হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত