Homeঅর্থনীতিবিএসইসিতে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক

বিএসইসিতে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক


বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখন এক সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে, আর গ্রেপ্তার-আতঙ্কে অনেক কর্মকর্তাই এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং অন্যান্য কমিশনারের অবরুদ্ধ রাখা এবং অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি এমন জটিল হয়ে ওঠে।

এ ঘটনার পর কমিশনের কর্মচারীরা শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং কর্মবিরতি পালনের মতো চরম সিদ্ধান্ত নেন। যদিও পরে তাঁদের এই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে এবং অনেকে আবার কাজে ফিরেছেন। তবে ১৬ জন কর্মকর্তা এখনো পলাতক, তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তা হচ্ছেন—বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপপরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ। বিএসইসির চেয়ারম্যানের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে এসব কর্মকর্তাকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন।

কীভাবে তৈরি হলো এই সংকট

বিএসইসি সম্প্রতি ১২টি কোম্পানির অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ জন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয় এবং নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এরপরই কমিশনের কর্মকর্তারা একজোট হয়ে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে নামেন। গত বুধবার চার ঘণ্টা কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ রাখা হয়, পরে সেনাবাহিনী এসে তাঁদের উদ্ধার করে। পরদিন কর্মবিরতির ঘোষণা দেন কর্মকর্তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ জানিয়ে দেন, কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। সরকারের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাবেন।

সংকটের মধ্যে কাজে ফেরার পালা

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেই গত শনিবার রাতে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে কর্মচারীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুনরায় কাজে যোগ দেন। এমন সময় বিএসইসি অফিসে গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ কর্মকর্তা আবার কাজে ফিরেছেন। যদিও গ্রেপ্তার-আতঙ্কে মামলা নিয়ে জড়িত ১৬ জন কর্মকর্তাকে অফিসে দেখা যায়নি। কাজে যোগ দেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে ফিরে এসেছি। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাঁরা এ পরিস্থিতিতে কীভাবে অফিসে ফিরবেন, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।’

গ্রেপ্তার-আতঙ্ক: পুলিশের অভিযান

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের খোঁজ করছে। শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম আজম জানান, ‘তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়নি; কারণ, তারা আমাদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

মামলায় নাম থাকা এক কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, এ জন্য আজকে (গতকাল) অফিসে যাইনি। সুস্থ হলে কালকে (আজ) অফিসে যাব। যদি গ্রেপ্তার করে, তাহলে করবে?’ তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছুর সঙ্গেই জড়িত নই। কিন্তু মামলার ঘটনায় সম্মানহানি হয়েছে। মা-বাবাসহ পরিবার ও স্বজনেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’

সংকট মোকাবিলায় একত্রে কাজের আহ্বান

এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। গতকাল গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বৈঠক শেষে তিনি কর্মকর্তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সবাইকে বলেছি কাজে যোগ দিতে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। সবাই কাজে যোগ দিলে বিএসইসির কাজ স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।’ তবে মামলায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তিনি স্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

ঘটনার তদন্তে সমর্থন ডিএসইর

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্য স্টেকহোল্ডাররা বিএসইসিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছেন, সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে, আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার হওয়া জরুরি। তবে নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পান, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। আমরা কমিশনের পাশে আছি।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত