চীনা কর্তৃপক্ষ দেশটির ২০২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫ শতাংশ। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের হাতে আসা চীন সরকারের বার্ষিক কার্যনির্বাহী প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মোকাবিলা করতে গিয়ে চীনের নীতিনির্ধারকেরা আরও প্রণোদনা দিতে পারেন—এমন প্রত্যাশা এতে আরও বাড়ছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং আজ বুধবার দেশটির জাতীয় পার্লামেন্টে তাঁর প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। টানা তৃতীয় বছরের মতো চীন একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে রাখল, তবে এবার তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
ব্লুমবার্গের হাতে আসা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন চলতি বছরের রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের একদিন পর। এই পদক্ষেপ চীনের রপ্তানি খাতকে সংকটে ফেলতে পারে, যা গত বছর দেশের মোট প্রবৃদ্ধির প্রায় এক-তৃতীয়াংশে অবদান রেখেছিল।
এরই মধ্যে বেইজিং আরও কিছু সংকটের মুখোমুখি—দেশটি ১৯৬০-এর দশকের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যহ্রাসের (ডিফ্লেশন) পথে রয়েছে, আর সম্পত্তি খাতের মন্দা এখনো তলানিতে পৌঁছায়নি।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তাঁর নীতিনির্ধারকদের ডিসেম্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও আগ্রাসী প্রণোদনা গ্রহণ করতে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনায় আরও বেশি সরকারি ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যার একটি অংশ অন্তত দুর্বল ভোক্তা ব্যয় চাঙা করতে ব্যবহার করা দরকার।
মূল্যহ্রাসের চাপ স্বীকার করে সরকার ভোক্তা মূল্যস্ফীতির (সিপিআই) লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে প্রায় ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। অতীতে এই লক্ষ্যকে সাধারণত সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু এবার এটি কমানো হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, নীতিনির্ধারকেরা দ্রুত মূল্যবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
গত দুই বছরে চীনে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অর্থনীতিবিদ এখন চাইছেন, সরকার এই লক্ষ্যমাত্রাকে নীতিনির্ধারণী কাঠামোর জন্য একটি বাধ্যতামূলক লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করুক।
লি কিয়াংয়ের প্রতিবেদন বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে উপস্থিত হাজারো প্রতিনিধির সামনে উপস্থাপিত হবে। সেখানে আর্থিক ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ইঙ্গিতও থাকবে। এতে বৈশ্বিক পণ্যবাজার ও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে।