দেশে গ্যাসের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এর উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আজ রোববার অনুষ্ঠেয় ৯ম জাতীয় পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দুটি বড় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। প্রকল্প দুটি হচ্ছে, ‘তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন’ এবং ‘বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ’। এ দুটি প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯২০ কোটি টাকা। সভাটি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকা প্রথম প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৮ কোটি টাকা। এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের মার্চে শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন দুটি কূপ থেকে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রকল্পটি ২০২৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে ২০২৮ সালের মার্চে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্রাহকদের প্রকৃত চাহিদা প্রায় ৫ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদিত হয় দেশীয় উৎস থেকে এবং ৯০০-১,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হয়। ফলে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন ও শিল্প-কারখানার ওপর। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকার গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পথ বেছে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন’, ‘বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পসহ আট মন্ত্রণালয়ের ১৪টি প্রকল্পে উত্থাপন করা হবে।
এ দুই প্রকল্প ছাড়াও বাকি ১২ প্রকল্প হলো চট্টগ্রামের বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি), চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি সেক্টর, দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর এয়ার পল্যুশন মনিটরিং, বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং) অ্যাগ্রিকালচার সিস্টেম রেস্টোরেশন কম্পোনেন্ট; বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং); বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমারজেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং) (বিডব্লিউডিবি); টেকনিক্যাল সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইনভেস্টমেন্ট টুয়ার্ডস অ্যাগ্রিকালচার সেক্টর ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম অব বাংলাদেশ, লাইবেবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ সিটিজ ফর অল (এলআইসিএ) প্রজেক্ট, গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা এবং স্ট্রেংদেনিং সোশ্যাল প্রটেকশন ফর ইমপ্রুভ রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন অ্যান্ড টার্গেটিং (এসএসপিআইআরআইটি) প্রকল্প।
এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বড় হলো বে টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় আটকে ছিল। আজকের বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্দরের কাজের গতি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গেম চেঞ্জার হয়ে দাঁড়াবে বে টার্মিনাল।