কাগুজে ও ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। পাচারের এই অর্থ ফেরাতে তোড়জোড় শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক।) দুদকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাসসহ কয়েকটি দেশে এস আলম গ্রুপের ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মনিরুল মওলাসহ ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। ৫, ৬ ও ৯ ফেব্রুয়ারি তিনটি পৃথক তারিখে দুদক তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
গত বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদের সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। দুদকের পাঠানো চিঠিতে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বর ও টিআইএন রেকর্ডপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, অর্থ পাচারের বিষয়ে কমিশন থেকে যে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার সবই নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এস আলম গ্রুপসহ অর্থ পাচারের অভিযোগে জড়িতদের বিষয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এই সময়ে ব্যাংকটি থেকে ঋণের নামে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়, যার বেশির ভাগই ঋণ হিসেবে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।
শিল্প গ্রুপটির ঋণ জালিয়াতির কথা প্রকাশ্যে এলেও তৎকালীন আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটে ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির লাল ফিতায় বাঁধা ফাইল খুলতে শুরু করে দুদক।
ইসলামী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এস আলমের পুত্র ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনকে আসামি করে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি, গত ৯ জানুয়ারি প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫৪ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলা ও গত ২৮ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতে ৫২ জনকে আসামি করে তৃতীয় মামলাটি করা হয়েছে।