Homeঅর্থনীতিএলডিসি থেকে উত্তরণে ‘অপ্রস্তুত’ বাংলাদেশ

এলডিসি থেকে উত্তরণে ‘অপ্রস্তুত’ বাংলাদেশ


অর্থনৈতিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার প্রেক্ষাপটে এখনো এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ—এমন মত দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার, নীতিগত প্রস্তুতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতির ঘাটতির কারণে উত্তরণের পর দেশ আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব মত উঠে আসে।

বক্তারা বলেন, এলডিসি উত্তরণ শুধু একটি মর্যাদার বিষয় নয়, এটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে বড় রকমের রদবদলের দরজা খুলে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো কোনো বড় বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে পারেনি, যা এলডিসি সুবিধা হারানোর পর দরকার হবে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই ঘাটতির ফলে প্রতিবছর প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি কমতে পারে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, দুর্বল আর্থিক খাত এবং ভুয়া পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভরশীল এক বিকল অর্থনীতির ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এই দুর্বল ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এলডিসি উত্তরণ কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, এলডিসি সুবিধা শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, এটি বৈশ্বিক সমর্থনের প্রতিফলন। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, বিদ্যুৎ খাতে অস্বচ্ছ চুক্তি এবং পোশাকশিল্প ছাড়া রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা হারানোর আশঙ্কা নিয়ে উত্তরণের পথে হাঁটছে। চামড়া ও খাদ্যশিল্পের মতো খাত শুল্ক বাড়ার মুখে পড়তে পারে, যেখানে ভারত ও চীনের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, উত্তরণ অনিবার্য হলেও তা যেন সুষ্ঠু প্রস্তুতির মাধ্যমে হয়। এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য জরুরি, যেখানে রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থাকবে।

চলমান সংকটের কথা স্বীকার করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল জানান, তিনটি মূল সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ দুটি সূচকে ভালো করছে, তাই সময়ক্ষেপণ না করে প্রস্তুতিতে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

ইইউ চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ ছাড়া অন্তত ২৫ লাখ শ্রমিক ঝুঁকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, অহংকার ত্যাগ করে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ, উৎপাদনশীলতা ও গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে।

এএফডির কান্ট্রি ডিরেক্টর সিনথিয়া মেলা বলেন, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির যে ভাব তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই ভ্রম। উত্তরণের আগে দরকার একটি বাস্তবতাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া রোডম্যাপ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণাপ্রধান ইশতিয়াক বারী। তিনি বলেন, এলডিসি সুবিধা হারালে দেশের ৭১ শতাংশ রপ্তানি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং জাপানে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে পোশাক ও জুতাশিল্পে। একই সঙ্গে জলবায়ু তহবিলের মতো রেয়াতি আন্তর্জাতিক সহায়তাও হারাতে পারে বাংলাদেশ।

ইশতিয়াক বারীর মতে, বাজারবৈচিত্র্য এবং রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ ছাড়া এলডিসি উত্তরণ শুধু একটি চ্যালেঞ্জই নয়, বরং একটি অপ্রস্তুত লাফ, যা বড় ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত