Homeঅর্থনীতিআইএমএফের ঋণ: কিস্তি ছাড়ের অপেক্ষা বাড়ল

আইএমএফের ঋণ: কিস্তি ছাড়ের অপেক্ষা বাড়ল


চলতি মাসের ৬ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে ঢাকা সফরে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। ব্যাংক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পরেও ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি আইএমএফ মিশন। ফলে দাতা সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণের এই দুই কিস্তি পেতে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের। এখন ঋণের কিস্তি ছাড়ের জন্য ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য আইএমএফের স্প্রিং মিটিংয়ে চোখ বাংলাদেশের। সেখানেই এই ঋণ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।

আইএমএফ মিশনের ঢাকা সফর শেষে প্রতিনিধিদলটির প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিউ যে ভাষ্য দিয়েছেন, তাতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁদের উদ্বেগ স্পষ্ট। বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা। মূল্যস্ফীতি কিছুটা হ্রাস পেলেও তা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে সংস্থাটি বলছে, নীতিগত কড়াকড়ি আরও বাড়াতে হবে, যাতে করে অর্থনীতির ভারসাম্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক অর্থ ঘাটতির বোঝা নিয়ে গভীর চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এমন বাস্তবতার মধ্যে আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা রকমের সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেই সঙ্গে করণীয় নির্ধারণে কিছু পরামর্শও দিয়েছে। ফলে উভয় পক্ষই আশা করছে, ওয়াশিংটনে আসন্ন স্প্রিং মিটিংয়ের মধ্যেই ঋণ কর্মসূচির বাকি অর্থছাড়ের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

একদিকে ব্যাপক কর ছাড়, অন্যদিকে কর আদায়ে দুর্বলতা—এই দুইয়ের ফাঁদে পড়ে রাজস্ব সংগ্রহ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকিতে ফেলছে। এই অবস্থায় আইএমএফ সরাসরি বলেছে, করব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, স্বচ্ছ, ন্যায্য এবং সহজবোধ্য একটি কর কাঠামো তৈরি না হলে সামাজিক ব্যয় ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগে সরকার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এগোতে পারবে না।

রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় মেটানো ও অর্থনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। মূল্য প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে এবং রিজার্ভ বাড়াতে বিনিময় হারে আরও নমনীয়তা আনার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ মিশন।

ব্যাংক খাত সংস্কারে তাগিদ

আইএমএফের বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাও উঠে এসেছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ, দুর্বল তদারকি এবং নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতার ঘাটতি—এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ মিশন। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি, যাতে করে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে বাস্তবায়িত হতে পারে।

প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার ব্যবধান

সরকার ইতিমধ্যে কিছু সংস্কারের ইঙ্গিত দিলেও বাস্তবায়নের গতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আইএমএফ বলছে, কেবল পরিকল্পনা নয়, সেগুলোর বাস্তবায়নে দৃঢ়তা ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনৈতিক প্রস্তুতি ও অবকাঠামো খাতে টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।

রাজনৈতিক সংকটের ছায়া

সাম্প্রতিক ‘গণ-আন্দোলন’ পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক পতনের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইএমএফ, যদিও তারা তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেনি। তবে এটি স্পষ্ট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে স্প্রিং মিটিংয়ে চুক্তি হলেও সেটি কতটা বাস্তব রূপ পাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত